পিত্তথলির পাথর, কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয়, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
এবং ব্যবস্থাপনা (Gallstones, Causes, Symptoms, Diagnosis, Homeopathy
treatment and Management)
পিত্তথলির পাথরঃ
লিভারের নিচে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীতে অবস্থিত একটি আনুষঙ্গিক অঙ্গ হলো গলব্লাডার বা পিত্তথলি। এটি পিত্ত লবণ, ইলেক্ট্রোলাইট, বিলিরুবিন, কলেস্টেরল, এবং অন্যান্য চর্বি সঞ্চয় করে রাখে। পিত্তরস বিশেষত বিলিরুবিন মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রে চর্বি হজমে এবং বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। এটা লিভারের পিত্তনালী থেকে যৌথ পিত্তনালীর মাধ্যমে পিত্তরস ডিওডেনামে প্রেরণ করা হয়।
পিত্তথলিতে পাথর হলো- পিত্তাসয়ে কলেস্টেরল, পিত্ত লবণ ও বিলিরুবিনের সংমিশ্রনে গঠিত শক্ত সঞ্চিত পদার্থ। পিত্তথলিতে পাথরের মেডিকেল টার্ম হলো কলেলিথিয়াসিস। গলব্লাডার বা পিত্তথলি অপসারণের জন্য সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো কলেলিথিয়াসিস।
পিত্ত পাথর হওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলিঃ
> বয়স - বেশি বয়স (বিশেষত ৬৫ বছরের পরে)।
> পথ্য - পাশ্চাত্য খাদ্য উচ্চ শক্তি, উচ্চ চর্বি, উচ্চ মিহি কার্বোহাইড্রেট, কম ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া।
> এনজাইম অপূর্ণতা - যেমন, সিকল সেল এনিমিয়া এবং কিছু অন্যান্য জেনেটিক পরিবর্তন।
> লিঙ্গ - স্ত্রীলিঙ্গ
> হরমোনের ভারসাম্যহীনতা - যেমন গর্ভাবস্থা বা ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে।
> ঔষধ - ইস্ট্রজেন, ইনসুলিন, জন্মবিরতিকরণ বড়ি বা পিল, কোলেস্টাইরামিন।
> স্থূলতা - বিশেষ করে সর্বোচ্চ তাহলে BMI (বডি মাস ইন্ডেক্স) থাকলে।
> ওজন হ্রাস - দ্রুত ওজন হ্রাস, রোযা, বা ক্র্যাশ খাবার খেলে।
> পারিবারিক ইতিহাস - পরিবার ইতিহাসে পিত্তপাথর থাকলে
> নারী পুরুষে তারতম্য - পুরুষদের চেয়ে নারীদের পিত্তাসয়ের পাথর হওয়ার সম্ভাবণা দ্বিগুণ।
পিত্তথলির পাথরের উপসর্গঃ
বেশীরভাগ মানুষেরই পিত্তথলিতে পাথরের কোন লক্ষণ দেখা যায় না। যে লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে তা হলঃ
উপরের ডান পেটে ব্যথা যা পিঠের দিকে ছড়িয়ে ডান কাঁধের পাখনার নিচে হতে পারে। উচ্চ চর্বি যুক্ত খাবার খেলেই পেট ফোলে যাবার অনুভূতি হবে। এটি জন্ডিস ঘটাতে পারে - হলুদ বর্ণের ত্বক এবং চোখের স্ক্লেরা সাদা, এবং সংক্রমণ।
পিত্তপাথরের জটিলতাঃ
পিত্তাসয়ের পাথরের জটিলতা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেঃ
* গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে প্রদাহ (cholecystitis)
* জন্ডিস সঙ্গে সাধারণ পিত্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা
* অগ্ন্যাশয়ের নালীর প্রতিবন্ধকতা এবং অগ্ন্যাশয় প্রদাহ (প্যানক্রিয়েটাইটিস)
* গলব্লাডার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে রোগ নির্ণয়ঃ
পিত্তাসয়ের পাথর নির্ণয়ের সবচেয়ে প্রচলিত পরীক্ষা হলো আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি (সিটি)। ইকোগ্রাফি এবং এক্সরেও পিত্তথলিতে পাথর নির্ণয়ে সাহায্য করে।
পিত্তথলির পাথর নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি রোগ নিরাময়ের একটি আধুনিক এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও সদৃশ উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এটি উপসর্গ ও জটিলতা মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য অবস্থায় রোগীর ফিরে যাবার একমাত্র উপায়। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু পিত্তথলির পাথর চিকিৎসাই নয়, এর অন্তর্নিহিত কারণ (Internal Cause) ও স্বতন্ত্র প্রবণতা (Individualization) মোকাবেলায়ও সহায়তা করে। স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন এবং চিকিৎসা জন্য, রোগীকে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন এবং রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
পিত্তথলির পাথর চিকিৎসার সহায়ক ঔষধগুলো নিম্নরুপঃ
বারবারিস ভুল, কার্ডোয়াস মেরিনাস, চায়না, কোলেস্টেরিনাম, কলোসিন্থ, লাইকোপোডিয়াম, ন্যাট্রাম সালফ, ভিরেট্রাম অ্যালবাম, ব্যাপ্টিসিয়া, ব্রায়োনিয়া, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, ক্যামোমিলা, চেলিডোনিয়াম, ডায়াস্কোরিয়া ভিলোসা, হাইড্রাস্টিস, ইপিকাক, আইরিস, ক্যালি বাই, ক্যালি কার্ব, ল্যাকেসিস, লিথিয়াম কার্ব, নাক্স ভম, ফসফরাস, সেপিয়া, এবং অন্যান্য ওষুধ।
নিম্নে কিছু ওষুধের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলঃ
Calcarea carbonica - পারিবারিক ইতিহাসে পিত্তাসয়ের এবং কিডনি পাথর; মাত্রাতিরিক্ত ওজনের; উচ্চ কলেস্টেরল এবং ৩ গ্রাইসেরাইডস; ক্রনিক বা পুরাতন কোষ্ঠকাঠিন্য। কুঁড়ে এবং উদ্বিগ্ন।
Chelidonium - ব্যথা উপরের ডান পেটে হয় যা পিছনে ছড়িয়ে যায়, ব্যথা ডান কাধেঁর পাখনার নিচে হয়।
Lycopodium - পারিবারিক ইতিহাসে পিত্তাসয়ের এবং কিডনি পাথর; অন্যান্য ক্রনিক হজমজনিত সমস্যা - গ্যাস্ট্রিক, পাকস্থলীর ক্ষত, কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ কলেস্টেরল। সামান্য খাওয়ার পরেই পেট বেশি ফোলা উঠা বা পেট পূর্ণ হওয়া। লিভার জনিত ব্যথা বেশিরভাগ বিকালে ঘটে বিশেষ করে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। খিটখিটে, অসঙ্গতি ঘৃণা করে কিন্তু তার রাগ চাঁপা দিয়ে রাখে।
Natrum sulphuricum - একাধিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা - পিত্তাসয়ের পাথর, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, হাঁপানি, COPD (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ), স্থূলতা, হাড়ের জোড়াইয় রোগ, বিষণ্নতা। আবহাওয়া পরিবর্তন এবং আর্দ্রতায় মাত্রাতিরিক্ত সংবেদনশীল।
Nux vomica - অম্বল বা বুকজ্বলা, বমি বমি ভাব, পেট ফোলে উঠা; সংকোচনশীল বা মোচড়ানো ব্যথা, আকস্মিক ব্যথা সঙ্গে পিত্তশূল; অতিরিক্ত মসলা সমৃদ্ধ খাবার ও পানীয় গ্রহন; অলস জীবনধারা; ঙখিটখিটে এবং অধৈর্য্য। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় পিত্তাসয়ের পাথর বিলিন হয়ে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং পিত্তপাথরে পুনরাবৃত্তিতে বাধা দেয়।
পিত্তথলির যত্নে করণীয় (Management):
* প্রতিদিন নিয়মিত প্রায় ২(দুই) লিটার পানি পান করুন,ফলে পুরো দেহে ঠিকভাবে রক্ত চলাচল করবে, যাতে পিত্তথলির সাথে সাথে পিত্তরসও ঠিকভাবে কাজ করবে।
* ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার, কিডনীর রোগ, শরীরের ওজন, রক্তে সংক্রমণের মাত্রা সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। এই রোগগুলো বাড়লে পিত্তথলি সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারেনা।
* যে কোন প্রকার মাদকদ্রব্য, ধূমপান, অতিরিক্ত ফাস্টফুড, তৈলাক্ত, মশলাযুক্ত খাবার মারাত্মক ক্ষতিকর।
* দীর্ঘ বছর ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী বড়ি, গর্ভনিরোধক বড়ি বা যৌনবর্ধক ঔষধ, যে কোন প্রকারের হরমোন এর ঔষধ অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
* প্রচুর পরিমানে তিক্ত জাতীয় খাবার, শাক সবজি এবং আাঁশ জাতীয় খাদ্য অনেক উপকারী।
* অবশ্যই তৈল ও চর্বিযুক্ত খাদ্য ত্যাগ করা উচিত। খাবারগুলোর বাড়তি তৈলাক্ত অংশ পিত্ত থলিতে জমে। বছরের পর বছর বা দীর্ঘ সময় ধরে এইভাবে তৈলাক্ত বর্জ্য বা কোলস্টেরল জমতে থাকে যাতে পিত্তরস ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। এই তরল পিত্তপদার্থগুলোই একসময় শক্ত পাথরে পরিণত হয়। যাতে হজমে ব্যাঘাতের দরুন পেটে ব্যথা হয়, এমনকি বুকেও ব্যথা হতে পারে।
* পিত্তথলিতে সংক্রমণে পুঁজ জমতে পারে। সংক্রমণে জ্বর জ্বর অনুভব, পেট ব্যথা, এবং বমিও হতে পারে। মাঝে মাঝে পেটের ডান পাশে ব্যথা অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
* দৈনিক কমপক্ষে একটি ফল খাওয়া উচিত। খাবারের তালিকায় অবশ্যই মৌসুমী ফল রাখুন।
* মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে হওয়া খাবার বা ওষুধ খাবেন না। এতে কিডনী ও লিভারের কার্যক্ষমতা দূর্বল হয়ে যায়, যা পুরো দেহের উপর প্রভাব পড়ে। গলব্লাডার বা পিত্তথলিও সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা।
* গর্ভবর্তী অবস্থায় অনেকেরই পিত্তপাথর হতে পারে। বংশগত (Hereditary) বা পারিবারিক ইতিহাস (Family history) থাকলেও পাথর হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বা খুব বেশি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন বা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকেন, তারাও পিত্তথলির পাথরে আক্রান্ত হতে পারেন।
-------------------------------------------------------------------
চিকিৎসার জন্য যোগাযোগের ঠিকানাঃ
ডাঃ মোঃ আতাউর রহমান।
ডি,এইচ,এম,এস (রংপুর), বি.এইচ.বি (ঢাকা)।
১৫+ বছরের অভিজ্ঞ , ক্রনিক ও পুরাতন রোগের সফল চিকিৎসক।
চেম্বারঃ-
সাদিক হোমিও হল,
মুন্সিরহাট বাজার (অগ্রণী ব্যাঙ্কের নীচতলা), সদর জেলা ঠাকুরগাঁও।
মোবাইলঃ নং – 01916–133246 ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন