সিফিলিস রোগের জীবানুর নাম ট্রেপনোমা প্যালিডাম। সিফিলিসকে কেউ কেউ উপদংশ রোগও বলে থাকেন। তবে যৌনরোগের তালিকায় এইডস রোগটি সংযুক্ত হওয়ার পর থেকে সিফিলিসের গুরুত্ব কিছুটা যেন কমে গেছে। অথচ এটি বেশ কষ্টদায়ক এবং জীবাণুজনিত একটি রোগ। শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আগে রোগটি ধরা পড়লে সহজে চিকিৎসা করা যায়।
যেভাবে ছড়ায়ঃ-
প্রধানত সিফিলিস আক্রান্ত নারী বা পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলনের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। তবে যারা সমকামী বা (মুখ পথে) অভ্যস্ত তাদেরও এ রোগ হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণের মাধ্যমেও সরাসরি অন্যের শরীরে এ রোগের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এ ছাড়া সিফিলিস আক্রান্ত মা থেকে গর্ভজাত শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভূমিষ্ঠ হতে পারে। কমোডের সিট, দরজার হাতল, সুইমিং পুল, গরম পানির টাব, বাথটাব, একই জামাকাপড় পরা বা বাসন ব্যবহার করলে সিফিলিস ছড়ায় না।
রোগের সুপ্তিকালঃ-
জীবাণু দেহে প্রবেশের পর রোগের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিতে ৯ থেকে ৯০ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণত ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেয়।
রোগের জটিলতাঃ-
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বলে ৩০ শতাংশ মেয়াদি সিফিলিস প্রাকৃতিকভাবেই ভালো হয়ে যায়। এটা শুরুতে পুরুষের যৌনাঙ্গের মাথায় বা শিশ্নে হালকা গোলাপি বর্ণের একটা দাগ হিসেবে দেখা দেয়। ধীরে ধীরে এটা বড় হয়ে ফোস্কা বা ঘায়ের মতো হতে থাকে। রোগ শুরুর দুই মাসের মধ্যেও যদি চিকিৎসা না নেওয়া হয়, তবে যৌনাঙ্গের ঘা দ্রুত ছড়াতে থাকে এবং সেই সঙ্গে জ্বর ও মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয় এবং শরীরের বিশেষ করে কুঁচকির গ্রন্থিগুলো বড় হয়ে যেতে থাকে। এ রোগ পায়ুপথ, ঠোঁট, মুখ, গলনালি, খাদ্যনালি, এমনকি শ্বাসনালিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চিকিৎসা নিতে অবহেলা করলে রোগটি খুবই জটিল আকার ধারণ করে। সিফিলিসের দেরির অবস্থায় শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, স্নায়ু, চোখ, হৃদযন্ত্র, রক্ত, ধমনি, যকৃৎ, হাড় ও সন্ধি প্রভৃতি ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অভ্যন্তরীণ ক্ষতি বহু বছর পর বোঝা যেতে পারে। সিফিলিসের শেষের দিকের অবস্থার লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর মধ্যে আছে মাংসপেশি পরিচালনায় অসুবিধা, অসাড়তা, অবশভাব, ক্রমেই অন্ধত্ব ও স্মৃতিভ্রংশ। অবস্থা আরো জটিল হতে থাকে এবং একসময় এই রোগ হৃৎপিণ্ড (হৃদযন্ত্রের সিফিলিস) এবং মস্তিষ্কে (নিউরোসিফিলিস) ছড়িয়ে পড়ে, যা রোগীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ-
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে (যেমন VDRL, TPHA) এই রোগটি শনাক্ত করা যায়। প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর সিফিলিসের পরীক্ষা করা উচিত। এ ছাড়া রক্ত পরিসঞ্চালন করার সময়ও এই টেস্ট করা উচিত। অভিজ্ঞ কোনো হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে প্রাথমিক পর্যায়েই সিফিলিস পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রী বা যৌনসঙ্গী উভয়েরই চিকিৎসা নেওয়া উচিত। অন্যথায় এই ইনফেকশন সঙ্গীর কাছ থেকে আবার হতে পারে।
প্রতিরোধঃ-
> যৌন সঙ্গীর সিফিলিস আছে কিনা নিশ্চিত হন।
> সিফিলিস থাকলে অবশ্যই, জোর করে হলেও চিকিৎসা করান।
> সিফিলিস আক্রান্তদের সাথে কোন ধরনের যৌন কার্যে যাবেন না।
> কনডম ব্যাবহার করেও না।
> কমার্শিয়াল সেক্স ওয়ার্কার দের কাছে যাবেন না।
> রোগীকে ঘৃণা করবেন না, রোগকে ঘৃণা করুন।
> এই রোগ কোনক্রমেই পুষে রাখবেন না।
> ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না।
সতর্কতাঃ-
অ্যালোপ্যাথি ট্রিটমেন্ট নিলে একবার সিফিলিস হলে দ্বিতীয়বার তা হবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। সফল চিকিৎসার পরও পুনঃসংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়। সিফিলিস থাকলে এইচআইভি-এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় দুই থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে অভিজ্ঞ কোন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রপার হোমিও ট্রিটমেন্ট নিলে এই রোগ একেবারে রুট লেভেল থেকে দূর হয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন