সন্ধান করুন

শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫

মাসিকের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রাকৃতিক কিছু উপায়

আপনার মাসিকের সময় কি অনেক পেটে ব্যথা হয় ? মাসিকের কথা চিন্তা করলে কি আপনি আঁতকে উঠেন? মাসিকের প্রথম দিন, যে দিন আপনাকে কাটাতে হয় ব্যাথার ঘোরে সেই দিনের কথা কে না জানে? অনেকেই মেয়েদের বোঝাতে চেষ্টা করে যে এই ব্যথা কিছুই না। এটা আমাদের মনগড়া একটি ব্যাপার। অন্যরা আবার বলে যে এই ব্যাথা একজন মেয়ে হয়ে জন্মাবার খেশারত।

যাদের মাসিকের সময় পেটে তীব্র ব্যাথা হয় তারাই শুধু জানে এর আসল রূপ। না, আপনার এই ব্যাথা মনগড়া কোন ব্যাপার না। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি ৪ জন তরুনির মধ্যে ৩ জন তরুনির এবং প্রতি ৪ জন মহিলাদের মধ্যে ১-২ জন মহিলার মাসিকের সময় এই তীব্র পেটে ব্যাথা ও অস্বস্তি হয়। তার ঊপর আরও দেখা গেছে যে গড়ে ৫ জন মেয়ের যদি এই তীব্র মাসিকের ব্যথা থাকে, তার মধ্যে ১ জনের ব্যথা এত তীব্র হয় যে সে স্বাভাবিক কাজকর্ম–জীবনযাপন করতে বার্থ হয়। ব্যথাটি সাধারণত কোমরে শুরু হয় এবং পায়ের উপরিভাগ পর্যন্ত চলে যায়। এটি মাসিকের সাথে শুরু হয় এবং ১২-২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। মাসিকের সময় আপনার জরায়ুর মাংসপেশি সংকোচন করে। এই সংকোচনের ফলে আপনার জরায়ুর ভিতর থেকে জরায়ুর ঝিল্লি (uterine lining) বের হয়ে যায় মাসিকের রক্ত হিসেবে।

আপনার জরায়ুর মাংসপেশি যখন সংকুচিত হয়, তখন তা জরায়ুর রক্ত সঞ্চালন সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেয়। এই কারণে তখন জরায়ুতে রক্ত এবং অক্সিজেনের (oxygen) অভাব হয়। যখন অক্সিজেনের (oxygen) মাত্রা জরায়ুর কোষগুলোতে (cells) কমে যায়, তখন এক রকমের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যা আমাদের শরীরে - অর্থাৎ জরায়ুতে - ব্যাথা করে। যদি এর সাথে সাথে বেশী রক্তক্ষরণও থাকে, তখন ব্যথা আরও বেশী অনুভব হয়। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যাথা কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাছাড়া অনেক মহিলারাই বলেন যে সন্তান প্রসব করার পর এই ব্যাথা আগের চেয়ে কমে যায়। সাধারণত জরায়ুর কোষগুলোতে (cells) অক্সিজেনের ঘাটতি হলেই এই ব্যাথা হয়। তবে এর আরও অন্য কারণ থাকতে পারে। আপনার ফাইব্রয়েড (fibroid) থাকতে পারে। এটি একটি রোগ যেখানে জরায়ুতে একটি টিউমার (tumour) হয়, তবে তা কোন ক্যানসার জনিত কারণে নয়। আপনার যদি ফাইব্রয়েড (fibroid) থাকে তাহলে আপনার মাসিকের সময় ব্যথা অনেক বেশী হবে।

আপনার এন্ডোমেট্রিওসিসও (endometriosis) থাকতে পারে। এটি একটি রোগ যেখানে জরায়ুর ঝিল্লি (uterine lining) জরায়ুর ভিতরে ছাড়াও শরীরের অন্যান্য স্থানে - যেমন ডিম্বাশয়ে (ovary) এবং গর্ভনালীতে (fallopian tube) - থাকে। মাসিক চক্রের (menstrual cycle) সাথে সাথে এই সব জরায়ুর ঝিল্লি (uterine lining) যা শরীরের অন্য স্থানে আছে তা বাড়তে এবং কমতে থাকে। তখন পেটে অনেক ব্যাথা হয়।

তাছাড়া আপনি যদি গর্ভনিরোধ ইমপ্ল্যান্ট (IUD – Intrauterine device) ব্যবহার করেন তাহলেও আপনার মাসিকের সময় অনেক ব্যাথা হতে পারে। এর কারণ জরায়ুর ভিতরে ওই ইমপ্ল্যান্টটি দেওয়া থাকে এবং তখন জরায়ুর মাংসপেশি বার বার সংকুচিত হতে থাকে তা বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য। ঐ মুহূর্তে ব্যথাটি অনুভূত হয়।

যেই কারণই হোক, আপনার যদি মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা থাকে, তাহলে আপনার একজন ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ করা খুবই জরুরী। এর পাশাপাশি আপনাকে আরও খেয়াল রাখতে হবে মাসিকের এই সমস্যার সাথে সাথে আর কোন সমস্যা হয় কি না। আপনার মাসিক কি অনিয়মিত হয়? আপনার কি দুই মাসিকের মাঝখানে হঠাৎ একটু অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয়? ঘন, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব ভাঙে? সহবাসের সময় কি ব্যাথা হয়? যদি আপনার মাসিকের ব্যাথা কোন রোগের কারণে হয়, তাহলে এই তীব্র ব্যথার পাশাপাশি আরও অন্যান্য উপসর্গ থাকবে। আপনাকে আরও খেয়াল করতে হবে এই ব্যাথা ক্রমশ বাড়ে কি না এবং সাধারণের চেয়ে লম্বা সময় ধরে থাকে কি না।

আপনি যখন একবার নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে আপনার এই তিব্র ব্যাথা কোন রোগের কারণে হচ্ছে না, তখন আপনি এই ব্যাথা কমানোর জন্য প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপায় অবলম্বন করতে পারবেন। কিছু কিছু ঘরোয়া প্রতিকার, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও ব্যায়াম আছে যা আপনার এই তীব্র ব্যাথা কমাতে সাহায্য করবে।

ব্যাথা কমাতে সবচেয়ে বেশী যেই পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়, তা দিয়ে শুরু করুন। এটি আমাদের নানী- দাদীর আমলেও ব্যাবহার করা হতো। ব্যাথা যখন বেশী হবে, তখন আপনার পেটের উপরে একটি গরম পানির ব্যাগ রাখুন। এতে আপনার রক্তের শিরাগুলো সংকুচিত না থেকে বড় হবে এবং তাতে রক্তসঞ্চালন ভালো হবে।

আপনি যদি একটি ছোট তোয়ালে মাইক্রোওয়েভে (microwave) গরম করে তলপেটের উপরে দেন তাহলেও একই কাজ হবে। আপনি যদি তলপেট এবং পিঠ গরম অলিভ ওয়েল (olive oil) দিয়ে মালিস করেন তাহলেও পেটে ব্যাথা কমে আসবে। যদি আপনার বিশ্রাম নেওয়ার সময় থাকে তাহলে আপনি কাত হয়ে দুই হাঁটু বুকের কাছে এনে শুয়ে থাকতে পারেন। এতে আপনার ব্যাথা কিছুটা কমবে। গরম গরম তরল খাবার – যেমন গরম দুধ, গরম সুপ ইত্যাদি খাবার এই সময় খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার মাংসপেশিগুলো ঢিলে হবে এবং আপনার আরাম লাগবে। সবজির রস যেমন শশার রস এবং গাজরের রসে অনেক অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট (anti-oxidant) থাকে যা আপনার শরীর থেকে যে কোন বিষাক্ত পদার্থ (toxins) বের করে দিতে সাহায্য করে। আপনি পানিতে আদা (ginger) দিয়ে সিদ্ধ করে নিয়মিত খেতে পারেন। মিন্ট ক্যান্ডি (mint cant) কিছুটা সাহায্য করে ব্যাথা কমাতে। আপনি এক গ্লাস ফুটন্ত পানিতে ১৫-২০টি ধনিয়া (coriander seeds) দিয়ে তা ঠাণ্ডা করে তারপর তা খেয়ে নিতে পারেন। যে কোন পানীয় খাওয়ার সময় চিনির বদলে মধু ব্যাবহার করতে পারেন। খাবারের উপরে দারচিনির গুঁড়ো (cinnamon powder) ছিটিয়ে নিতে পারেন। এর কারণ দারচিনি একটি প্রাকৃতিক ঔষধ যা ব্যাথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে। পুষ্টিকর সুষম খাদ্য খান, এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রচুর পরিমাণে পানি খান এবং ২ ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব করুন। আপনার মুত্রথলি (bladder) যদি ভরা থাকে, তাহলে তা জরায়ুর উপরে চাপ দেয় এবং আপনার ব্যাথা আরও বেশী হয়। যদিও আপনার এই সময় ব্যায়াম করতে ইচ্ছা করবে না, তবুও হালকা ব্যায়াম করলে খুব সাহায্য হয়। আপনি এই সময় একটু হাটতে পারেন, সাইকেল চালাতে পারেন, বা যোগ ব্যায়াম করতে পারেন পেটে ব্যাথা কমানোর জন্য।

ডাঃ মোঃ আতাউর রহমান
সাদিক হোমিও হল,
মুন্সিরহাট বাজার,
সদর জেলা ঠাকুরগাঁও।
মোবাইলঃ ০১৯১৬১৩৩২৪৬

২টি মন্তব্য: