*********************************************************
হাঁপানী বাংলা আর ইংরেজীতে অ্যাজমা। অ্যাজমা একটি গ্রিক শব্দ। গ্রিক ভাষায় অ্যাজমা শব্দের অর্থ হাঁপানী, শ্বাসকষ্ট বা হাঁ করে শ্বাসগ্রহণ করা। শিশু ও বৃদ্ধরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
হাঁপানী বা অ্যাজমা কি?
হাঁপানী বা অ্যাজমা এমন একটি অসুখ যাতে শ্বাসনালীর বিভিন্ন শাখা প্রশাখার সংকোচনের ফলে রোগীদের শ্বাস নিতে ও ছাড়তে অনেক কষ্ট হয় এবং রক্ত পরিশোধন বাধাপ্রাপ্ত হয়।
হাঁপানী কেন হয়?
হাঁপানী বা অ্যাজমা কেন হয় তার প্রকৃত কারণ আজ পর্যন্ত জানা না গেলেও জেনেটিক কারণকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে গবেষকরা।
Helth-Ezma Human body pic হাঁপানীর লক্ষণঃ
হাঁপানী রোগী চিনতে সাধারণত কোন অসুবিধা হয় না। আমরা সহজেই হাঁপানী রোগীকে চিনতে পারি। হাঁপানী রোগীর প্রধান তিনটি লক্ষন।
১. শ্বাস কষ্ট,
২. কাশি, ও
৩. বুকে শা শা শব্দ করা।
তবে দীর্ঘ মেয়াদী কাশিও হাঁপানীর লক্ষণ হতে পারে। শেষ রাত্রের দিকে সাধারণত হাঁপানী রোগীর কষ্ট বেশি হয়। এবং অনেক রোগীর কষ্ট মাঝ রাত্রেও হয়। কারও কারও হাঁপানী সারা বছর কম বেশি লেগে থাকে। হাঁপানী ছাড়াও
আরো অনেক কারণে শ্বাস কষ্ট হতে পারে। জীবজন্তুর লোম, পাখির পলক, ছত্রাকের বীজ, গুটি, শিল্প-কলকারখায় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ। এক কথায় অ্যাজমা বলতে শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত একটি ক্রনিক অসুখ বা ব্যাধি। অ্যাজমার আক্রমনে মানুষ শুধু কষ্টই ভোগ করে না, অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও বরণ করে। এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও কষ্টদায়ক ব্যাধি।
তবে এই সমস্যার ৮০ শতাংশই হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য সম্ভব। কোনো ধরণের উত্তেজক পদার্থের উপস্থিতি ছাড়া অ্যাজমার কারণ খুব কম ক্ষেত্রেই জানা যায়। বিশেষ করে শীতের ঠান্ডা, হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন, ধুমপান এবং ধোঁয়াযুক্ত আবহাওয়ায় অ্যাজমার আক্রমন অথবা অ্যাজমার ক্রনিক উপসর্গ বৃদ্ধি পায়। গভীর রাত এবং ভোরে অ্যাজমার আক্রমন বৃদ্ধি পায়। কারণ রাতদিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই সময়ে শ্বাসনালী সব থেকে বেশি সঙ্কুচিত থাকে।
অ্যাজমার আর্থসামাজিক প্রভাবও খুব মারাত্মক, বিশেষ করে অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি। এতে একদিকে যেমন রোগীকে পর্যাপ্ত অর্থদণ্ড হয়, তেমনি অন্য দিকে তার শারীরিক কষ্টও বৃদ্ধি পায়।
হাঁপানী বা অ্যাজমায় মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। চিকিৎসায় পরিবর্তনশীল, শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা, বুকে শোঁ শোঁ শব্দ, কাশি, বুকে চাপ ধরা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি অ্যাজমা বা হাঁপানী রোগের প্রধান লক্ষণ। বুকে হঠাৎ পানি জমা, তীব্র শ্বাসকষ্ট, বুকে বাতাস জমা, নিউমোনিয়া, হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট, বাইরের কোনো বস্তু ফুসফুসে অনুপ্রবেশ, ফুসেফুসের কোনও অংশের কার্যকারিতা লোপ পাওয়া, বাকযন্ত্র ফুলে যাওয়া, দুশ্চিন্তার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসের আধিক্য, অনেক দিন ধরে হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা হ্রাস, মাংসপেশিতে রক্তস্বল্পতা, পুরনো অ্যাজমা, শ্বাসনালীতে ক্যান্সার, বাইরে থেকে ফুসফুসে অনুপ্রবিষ্ট অ্যালার্জিজনিত কারণ, বাইরে থেকে ধূলিকণার মতো ছোট পদার্থের ফুসফুসে অনুপ্রবেশ, ফুসফুসে বেশি পরিমাণ পানি জমা, তীব্র রক্তস্বল্পতা ও শরীর ফুলে যাওয়া ইত্যাদি কারণেও তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
Helth-homeopathy pic:
হাঁপানী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক ধরণের এলার্জিক ব্যাধি এবং এই ধরণের হাঁপানীকে এলার্জিক বা এক্টপিক হাঁপানী বলা হয়। এদের বেলায় শ্বাস কষ্ট খুব অল্প বয়সেই আরম্ভ হয়। সাধারণত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও হাঁপানী প্রবণতা বা একজিমা নাসা প্রবণতা ইত্যাদি দেখা দেয়। আমাদের চার পার্শ্বে অসংখ্য এলার্জেন আছে যা খোলা চোখে দেখা যায় না। আক্রমন করলে হাঁপানীতে পরিণত হওয়ায় সম্ভবনা বেশি থাকে।
হাঁপানী রোগীকে নিম্নের বস্তু হতে এ্যালার্জেন হতে পারে যেমনঃ
ফুলের রেনুস বা পরাগ বা ধূলা-বালু ও ময়লা ইত্যাদি হতে।
এলার্জেন কিভাবে হাঁপানী জন্ম দেয়?
অধিকাংশ এলার্জেন বায়ুবাহিত হয়ে শ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করে, অবশ্য খাদ্য জাতিয় এলার্জেনসমূহ রক্তের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌছে। ফুসফুসের ক্লেম ও অনুক্লোমনালীতে মাস্টনামক অসংখ্য কোষ থাকে। যখন কোনও এলার্জেন শ্বাস যন্ত্রে প্রবেশ করে শরীরে আক্রমন করার কারণে মাস্ট নামক কোষগুলো ভেঙে ফেলে। মাস্টগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় হিস্টামিন, ব্রেডিকাইনিন, লিউকোট্রিনস, প্রস্টাগ্লেন ডিনস ইত্যাদি ধরণের পদার্থ নির্গত হয় এসব বস্তুর প্রভাবে ক্লোন ও অনুক্লোন নালীর সংকোচন ঘটে এবং প্রদাহের সৃষ্টি হয়। প্রদাহ সৃষ্টির ফলে ক্লোন ও অনুক্লোন নালীর গায়ে শ্বোথের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরি হয়ে বায়ু চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে এবং রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়। প্রদাহের কারণে রক্তে প্রবাহিত ইয়োসিনোফিল ও নিউট্রোফিল জাতীয় শ্বেতকনিকা বা অনুচক্রিকা ইত্যাদি শ্বাসযন্ত্রের গায়ে প্রদাহের স্থানে ছুটে আসে। হাঁপানী বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
চিকিৎসাঃ
সঠিক ও স্থায়ী চিকিৎসা নির্ভর করছে রোগের কারণ খুঁজে বের করার উপর। হাঁপানী রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকের ভাল জ্ঞান থাকলে চিকিৎসায় ভাল ফল আশা করা যায়। হোমিও চিকিৎসায় হাঁপানী বা অ্যাজমা রোগ ব্যবস্থপনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সেসব মেডিসিন প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীকে রোগের উপশম করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, সে সব ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং প্রয়োজনে বাড়ানো ও কমানো যায়। তবে এ ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পর্কে রোগীকে সচেতন করতে হবে।
বর্তমানে হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে কার্যকরভাবে অ্যাজমা বা হ্যাঁপানী নিরাময়ের অনেক ওষুধ হোমিওপ্যাথিতে আছে। এছাড়া বর্তমানে নানা ধরণের ইনহেলার (যে ওষুধ শ্বাসনালীর সাহায্যে গ্রহণ করা হয়) আবিস্কৃত হওয়ায় অ্যাজমা চিকিৎসা অনেকটা সহজ হয়েছে। তবে ইনহেলার নিলে রোগীর সাময়িক কষ্টের লাঘব হলেও প্রকৃতপক্ষে সূচিকিৎসা হয় না। ইনহেলার নেওয়ার কারণে ক্ষতিও হতে পারে। ইনহেলার সাময়িক সময়ের জন্য দ্রুত কাজ করে এবং ইনহেলারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। অ্যাজমা রোগীকে নিজের স্বার্থে অনেক কিছু থেকে দূরে থাকতে হবে। যথা ধুলা-বালি ঠান্ডা জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকা ও ঠান্ডার মৌসুমে সতর্ক থাকতে হবে। যেসব খাবারে হাঁপানী বাড়ে যেমনঃ গরুর গোস্ত, হাসের গোস্ত ও ডিম, ইলিশ মাছ ও চিংড়ি মাছ এগুলো এড়িয়ে চলুন। সব সময় সুতি কাপড় ব্যবহার করা উত্তম, এবং যে বাড়ীতে রোগী আছে সে বাড়ীতে ধুমপান না করা উত্তম। অ্যাজমা একটি ক্রনিক রোগ, এমনিতেই এ রোগ ভালো হয়ে যাবে, এটা আশা করা ঠিক নয়। অ্যাজমায় দীর্ঘ দিন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। এ কারণে রোগী ও তার পরিবারের সদস্য (যারা সব সময় তার কাছ থাকে) এবং চিকিৎসকের মধ্যে ভালো পর্যবেক্ষণ থাকা দরকার। যেহেতু অ্যাজমা একটি ক্রনিক রোগ, এ রোগে রোগীর কর্মক্ষমতা লোপ পায় এমনকি কখনও রোগী মৃত্যু বরণ করতে পারে, তাই অবহেলা না করে সঠিক সময়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করানো শ্রেয়।
সন্ধান করুন
বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫
হাঁপাণী বা অ্যাজমার লক্ষণ ও তার হোমিও চিকিৎসা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন