অঙ্গুলির অগ্রভাগে তীব্র জ্বালা ও যন্ত্রণাকর পুজাত্মক প্রদাহকে আঙুল হাঁড়া বা হুইটলো বা ফেলন বা প্যারওনাইকিয়া বলা হয়। প্রদাহ অঙ্গুলিতেই সীমাবদ্ধ থাকিতে পারে; কখন কখন করতল, এমন কি বাহু পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়া পড়ে।
তিন শ্রেণীর আঙুল-হাঁড়া হইতে দেখা যায়। যথা – উপত্বকীয় বা সাব
– কিউটি কিউলার,
– কৌষিক তন্তুজ বা সেলিউলার ও ঝিল্লিজ বা থেক্যাল হুইটলো বা ফেলন।
* উপত্বকীয় বা সাব – কিউটিকিউলার শ্রেণী – ইহাতে কেবল মাত্র অঙ্গুলির উপত্বক নিয়ে প্রদাহ হইয়া পুঁজ জন্মে। সামান্য যন্ত্রণা থাকে এবং ফোস্কার ন্যায় উদ্ভেদ সৃষ্ট হয় ও তাহা বিদীর্ণ হইয়া পুঁজ নির্গত হইলে আরোগ্য হয়। এই সমস্যাটি সোরিক মায়াজমের কারনে হইয়া থাকে।
* সেলিউলার শ্রেণী – ইহাতে অঙ্গুলি-শীর্ষের সেলিউলার টিসু ও পেশিবন্ধনী বা টেগুণসমূহ পর্যন্ত প্রদাহিত হয়। অঙ্গুলি-শীর্ষ স্ফীত ও তীব্র যন্ত্রণাযুক্ত হয় এবং প্রদাহ ঊর্ধ্বে পরিচালিত হয়, কিন্তু যন্ত্রণার জন্য অঙ্গুলি নাড়াচাড়া করিতে বিশেষ কষ্ট হয় না; আক্রান্ত স্থান উত্তপ্ত হয় এবং অবিশ্রান্তভাবে দপদপ করিতে থাকে এবং হস্ত নিম্নমুখে ঝুলাইয়া রাখিলে যন্ত্রণার প্রখরতা নিদারুন হইয়া উঠে। ইহাতে ২/৪ দিনের মধ্যেই পুঁজ জন্মে এবং পুঁজ বহির্গত হইলেই ধীরে ধীরে আরোগ্য হয়। কখন কখন অঙ্গুলি-শীর্ষের অস্থিখণ্ডের পচন বা নক্রোসিস হইতে পারে। এই সমস্যাটি সিফিলিটিক মায়াজমের কারনে হইয়া থাকে।
* থেক্যাল হুইটলো বা ফেলন – ইহাই প্রকৃত আঙুলহাঁড়া। ইহাকে প্যারওনাইকিয়াও বলা হয়। ইহাতে অঙ্গুলির পেশী – বন্ধনী বা টেগুণ ও তাহার আবরক পর্দার তীব্র প্রদাহ উপস্থিত হয় এবং অঙ্গুলির অস্থিসমূহও আক্রান্ত হইয়া পড়ে। আক্রান্ত স্থল লাল ও গরম হয় এবং পেশী বন্ধনী বা অস্থি আবরক ঝিল্লী বা পেরি অষ্টিয়াম ও অস্থি প্রদাহাম্বিত হইয়া ভীষণ দপদপানি ও দুর্বিষহ টাটানি বেদনায় রোগী ছটফট ও আর্তনাদ করিতে থাকে, আদৌ ঘুমাইতে পারে না। সমগ্র হস্ত অত্যধিক স্ফীত হয় এবং প্রদাহ ঊর্ধ্বে বিস্তৃত হইয়া সমগ্র নিম্নবাহু স্ফীত হইয়া উঠে। আক্রান্ত অঙ্গুলি বক্রভাব ধারণ করে এবং রোগী তাহা সঞ্চালন করিতে পারে না ; হস্ত নিম্নদিকে ঝুলাইয়া রাখিলে বেদনা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কয়েক দিনের মধ্যে টেগুণের পর্দা, সেলিউলার টিসু ও পেরিঅষ্টিয়াম মধ্যে পুঁজ জন্মে ও তাহা অঙ্গুলি ও হস্ত অতিক্রম করিয়া বিস্তৃত হইয়া পড়ে। প্রায়ই অঙ্গুলির অস্থির পচন বা নিক্রোসিস হয় এবং সুচিকিৎসিত না হইলে গ্যাংগ্রিন হইয়া পেশী বন্ধনী বা টেগুণ পচিয়া অঙ্গুলির এক বা ততোধিক অস্থিখণ্ড খসিয়া যাইতে পারে। কখন বা পেশী বন্ধনী অস্থিসহ খসিয়া যাইতে পারে। কখন বা পেশী বন্ধনী অস্থিসহ সংলগ্ন হইয়া পড়ে ও অঙ্গুলি স্থায়ীভাবে বক্র ও অকর্মণ্য হইয়া থাকে।
চিকিৎসাঃ-
প্রদাহিক অবস্থায় উষ্ণ জলে কিঞ্চিত লবণ মিশ্রিত করিয়া তন্মধ্যে অঙ্গুলি ডুবাইয়া রাখিলে যন্ত্রণার লাঘব হইয়া পুঁজৎপত্তি ত্বরাম্বিত করে । উষ্ণ জল সহ্য না হইলে ডায়স্কোরিয়া কিম্বা আইরিস ভারস মুল অরিষ্ট অথবা নাইট্রিক এসিড Q ১০ ফোঁটা এক আউন্স শীতল জলের সহিত মিশ্রিত করিয়া তন্মধ্যে অঙ্গুলি ডুবাইয়া রাখিলেও উপকার হয় । পুঁজ হইলেও এই প্রতিক্রিয়ায় সহজেই তাহা বিদীর্ণ হইয়া পুঁজ নির্গত হইলে যন্ত্রণার লাঘব হয় ।
ঔষধাবলি –
প্রদাহের প্রথমাবস্থায় ও পুঁজৎপত্তির পূর্বে সালফার প্রয়োগ করিলে রোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হইতে পারেদ। পুঁজৎপত্তি হইয়া থাকিলে, বিশেষত যদি তাহা নির্গত হইতে থাকে, অধিকিন্তু যদি পুঁজ বিবর্ণ ও দুর্গন্ধ যুক্ত হয় এবং অস্থি আক্রান্ত হয় তাহা হইলে সাইলিসিয়া বিধেয়। কিন্তু পুঁজৎপত্তির পর তাহা নির্গত না হইলে হিপার অথবা মাইরিষ্টিকা 3x বিশেষ ফলপ্রদ। ইহাতে পুঁজ নির্গত হইতে আরম্ভ করিলেই পুনরায় সাইলিসিয়া ব্যবস্থেয়। ইহাতে প্রায় সমুদয় লক্ষণাদি তিরোহিত হয় অন্যথায় আক্রান্ত অঙ্গুলিতে হুলবিধনবৎ জ্বালাময় যন্ত্রণা থাকিলে এপিস ;
★ ক্ষতস্থান অত্যধিক স্ফীত, ঈষৎ কৃষ্ণাভ এবং তাহাতে আগুনের ন্যায় জ্বালা, অস্থিরতা, উদ্বেগ, মধ্য রাত্রিতে যন্ত্রণার বৃদ্ধি, প্রভুতি লক্ষণে আর্সেনিক (উপকার না হইলে আন্থ্রাসিনাম ; ক্ষতস্থান নীলবর্ণ ধারণ করিলে ল্যাকেসিস)
★ অস্থি বিনষ্ট হইলে বিশেষত সাইলিসিয়া বিফল হইলে ও শীতল বস্তু প্রয়োগে উপশম বোধ হইলে এসিড ফ্লুওরিক শীতল বস্তু প্রয়োগে উপশম এবং যন্ত্রণা যদি স্নায়ু দিয়ে উপর দিকে ধাবিত হয় লিডাম (সাইলিসিয়া ও আর্সেনিক – উত্তাপ প্রয়োগে উপশম)
★ ক্ষত মধ্যে কাঁটা ফুটিবার ন্যায় যন্ত্রণায় এসিড নাইট্রিক,
★ টেগুণ ও তাহার আবরক পর্দার মধ্য দিয়া প্রদাহ ও পুঁজ বিস্তৃত হইয়া পড়িলে – মার্ক - বিন – আয়ড বা সল ;
★ সুচ বা পেরেক বিদ্ধ হইবার জন্য আঙুল হাঁড়ায় – লিডাম ;
★ উপযুক্ত লক্ষণাদি সহ এপিস প্রযুক্ত হইয়া বিফল হইলে সালফার ফলপ্রদ ;
★ দুরস্ত যন্ত্রণার রোগী উম্মাদের ন্যায় আচরণ করিলে কখন কখন Stramonium প্রয়োগে অতি শীঘ্র যন্ত্রণার লাঘব হইয়া পুঁজ নির্গমন সুগম হয়।
ডাঃ মোঃ আতাউর রহমান। ডি, এইচ, এম, এস।
১৫ + বছরের অভিজ্ঞ, ক্রনিক ও পুরাতন রোগের সফল চিকিৎসক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন