আমাদের শরীরে সর্বদায় স্বাভাবিক নিয়মে নতুননতুন কোষ সৃষ্টি হয় প্রয়োজন মোতাবেক স্তন ও এর বাহিরে নয়। যদি কোন কারনে অপ্রোজনীয় ভাবে ব্রেস্টে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়,
আর স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি ঘটিতে থাকে এবং চাকা অথবা পিন্ড আকার ধারন করতে থাকে তবে একে স্তন টিউমার বলা হয়। এ টিউমারটি যদি স্বাভাবিককোষ ধারা হয়ে থাকে তবে তাকে অক্ষতিকারক /বিনাইন টিউমার বলে।যা ক্যান্সার নয়। আর যদি অস্বাভাবিক কোষ ধারা তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকে তবেই তাকে ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যান্ট বলা হয়। এর সূত্র পাত কোষে হয়ে গ্ল্যানডিউলার টিস্যু সহ স্তনের সবকটি লোবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে ডাক্টস এবং লবিউলসে।
স্তন ক্যান্সার কোন কোন কারনে হতে পারেঃ স্তন ক্যান্সারের এবং যে কোন ক্যান্সারেরই প্রকৃত কারণ কারো জানা নেই। তবে কিছু কিছু ফ্যাক্টুরকে জোরালো ভাবে দায়ী করা হয়ে থাকে বিশেষ করে যেমন ৪০ উর্ধে বেশী বয়সে এর ঝুকিটা বেশী দেখা যায় বা হয়ে থাকে। কিন্তুু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য বর্তমানে ১৮ বৎসরের এবং ২৬ বৎসরের দুটি মেয়েকে চেম্বারে ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ আসতে দেখা গেল।
বংশানুক্রমে :-
এই মাত্র উপরে যা পড়লেন , ২টি মেয়ের কথা তাদের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে দেখা গেল একজনের মায়ের বর্তমানে ক্যান্সার আছে, অন্যজনের বংশেও আছে। মা, বোন, খালা, ফুফুদের থাকলে ঝুকিটা বেড়েযায় কয়েক গুন। রক্তের সম্পর্কিত কোন পুরুষের ক্যান্সার থাকলেও উক্ত মহিলার ঝুকি থাকে।
ফ্যামিলিয়াল/জেনিটিক:- ব্রেস্ট ক্যান্সার জিন বিআরসিএ বা বিআরসিএ যে কোনটা বহন করলে ঝুকি থাকে।
মা হবার বয়স :- ৩০ বৎসরের বেশী বয়সে, যদি কেউ মা হয় তবে তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে।
মদ্যপান :- মদ্যপান স্তন ক্যান্সার সহ,মুখ, গলা সহ অন্যান্য অর্গানের ক্যান্সার ঝুকি বাড়ায়।
ধূমপান :- যে সকল মায়েরা ধুম পানের সাথে জড়িত বা যাদের ঘরে ধূম পায়ী আছে তাদের থেকেও আক্রান্ত হতে পারেন।
সাদা/জর্দ্দা/ পান মশলা :- এক গবেষণায় দেখা গেছে সুপারী তা বাড়িয়ে দিতে পারে। আর ধূমপানের চেয়ে সাদা/জর্দ্দা বেশি ক্ষতি করতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন :- যাদের শারীরিক ওজন বেশি থাকে, শরীরে মেদের পরিমান বেশি থাকে।
অতিরিক্ত ফেটি খাবার :- যাদের অভ্যাস আছে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাদ্য বেশি খাওয়া, যারা শাক জাতীয় খাবার কম খায়,গোস্ত জাতীয় খাবার বেশি খায়।
অতিরিক্ত রেডিয়েশন :- যাদের শরীরে খুব বেশি এক্স্-রে করা হয়েছে, যারা খুব বেশি রেডিয়েশন চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে অন্যদের তুলনায়।
ঔষধের অপব্যবহার :- কিছু কিছু ঔষধ ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। একথাটা শুনলেই অনেকে মনে করেন যে এলোপ্যাথিক ঔষধেই তা করে থাকে, তা ঠিক নয়। অনির্বাচিত প্রয়োজনের অতিরিক্ত হোমিওপ্যাথিক ঔষধও এমনটি করতে পারে।যার ফলে এক ডোজ খাওয়ার পর রোগীর পুনরায় ডায়াগনোসিম ছাড়া ঔষধ সেবন ঠিক নয়।
মেনোপজ :- দেরিতে মেনোপজ হলেও ঝুকি আছে।আবার কেউ মনে করে মেনোপজ আসা মানে যৌনজীবনের পরিসমাপ্তি তাই হরমোন জাতীয় ঔষধ খেয়ে মাসেক ¯্রাব দীর্ঘায়িত করতে চান।যা স্তন ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুকি বাড়িয়ে দিতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রন বড়িকেও এব্যারে দায়ী করা হয়ে থাকে।
স্তন সিস্ট বা চাকা :- দীর্ঘদিন স্তনে সিস্ট থাকলে, যদি বড় হয়ে যায় সাথে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি থাকে।স্তনের চাকা বা বিনাইন টিউমার যদি এমনি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবংপাশাপাশি অস্বাভাবিক থাকে।
আপনি যে ভাবে বুঝবেন স্তন ক্যান্সার হয়েছেঃ যে কোন স্তনে প্রথমে এক বা একাধিক ছোট আকারে টিউমার/চাকা বা ছোট গোটা আকারে দেখা দেয়।
মাসিক ঋতু¯্রাবের সময় বেশি অনুভব হতে থাকে।
স্তনের বোটা হতে রস নিঃসৃত হতে পারে, তা পরিস্কার বা রক্তের মত হতে পারে।
প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় লসিকা গ্রন্থিতে থাকে তেমন বেদনা থাকে না।
চাকা বা গুটি নড়া-চড়া করানো যায়।
পরবর্তীতে নড়া-চড়া না করে স্থির থাকে।
ব্যথা বেদনা হতে থাকে। ব্যথার ধরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে।চিড়িক মারা ব্যথা,ঝিমধরা ব্যথা বা সর্বদায় ব্যথা থাকা।
অস্বাবধানতায় চাপে, রিক্সার ঝাকিতে ব্যথা হতে পারে।
ব্রেস্টের আকার-আকৃতির পরিকর্তন হতে পারে।
স্তনের ত্বকের কালার পরিবর্তন হতে পারে।
যে কোন এক স্তনের ক্যান্সার পরবর্তীতে উভয় স্তনে,বুকের হাড়ে, গলার নীচে, পরবর্তীতে হাড়ে শিরদাড়ায় এবং শরীরেঅন্যান্য অর্গানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্তন ক্যান্সারের স্টেজ:- স্তন ক্যান্সারের তীব্রতানুযায়ী
স্টেজ- ১ ইঞ্চির কম স্থানে কোথাও না ছড়িয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে।
স্টেজ-২: ১ ইঞ্চির কম বটে কিন্তু লসিকা গ্রস্থিতে ছড়িয়েছে বা ২ ইঞ্চি পরিমানে কিন্তু কোথাও ছড়ায়নি।
স্টেজ-৩: টিউমারের আকার ২ ইঞ্চির বেশি হলে এবং লসিকা গ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়লে। বা যে কোন আকারের টিউমার গ্রন্থি গুলোর একে অপরের সাথে লেগে গেলে।
স্টেজ-৩/বি: যে কোন আকারের টিউমার, ত্বকে, স্তনের নীচে, বুকে ছড়িয়ে পড়লে বা ইন্টারনাল মেমারী লসিকা গ্রন্থিতে অবস্থান করে।
স্টেজ-৪: এঅবস্থায় ক্যান্সার আর স্তনে সীমাবদ্ধ না থেকে দূরবর্তী স্থানে যেমন- দূরবর্তী লসিকা গ্রন্থি, ফুসফুস,বুকে,হাড়ে ছড়িয়ে যায়।
স্তন ক্যান্সার নির্ণয় :-
আপনি নিজেই আপনার স্তন পরীক্ষা করে দেখেন কোন রকম অসাধারনতা পরিলক্ষিত হয় কিনা। এবং আজকের লিখিত উপসর্গের কোনটা উপস্থিত আছে কিনা। শুধু মাত্র টিউমার হলেই ক্যান্সার নয়। প্রয়োযনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এ ব্যাপারে। আক্রান্ত ব্রেস্টের এক্স-রে করে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে, মেমোগ্রাপি করে, এফ এন এ সি করে, বায়োপসি করে জানতে পারেন কোন অবস্থায় বা কোন স্টেজে আছে।
চিকিৎসা :-
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে হোমিওপ্যাথিতে সম্পূর্ণ এবং সফল ভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। হোমিওপ্যাথিতে বর্তমানে অনেক আরোগ্য দানকারী মেডিসিন রয়েছে যে গুলোর শর্ত হলো প্রাথমিক পর্যায় রোগ নির্ণয়, সঠিক এনামনসিস,এবং পাওয়ার, সেবন পদ্ধতি ও নির্বাচনসঠিক হলে ইনশাআল্লাহ ভাল হবেন। যে সকল হোমিওপ্যাথিকঔষধ গুলো বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন- ফাইটোলক্কা, ব্রায়োনিয়া, আর্সেনিকএলব্ , কার্ব এ্যানিমেলিস, কোনিয়াম মেকুল্যাটাম, ক্যার্সিনোসিন, এক্স-রে ইত্যাদি। প্রয়োজনে সার্জেক্যাল চিকিৎসা নিতে হবে। ক্যামোথেরাপি, রেডিওথ্যারাপি সাহায্য করতে পারে।
স্তন ক্যান্সারপ্রতিরোধের উপায় :-
যত তাড়াতাড়ি আপনার রোগ ধরা পড়বে তত তাড়াতাড়ি সুচিকিৎসা সম্ভব।
স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।
অতি লজ্জা চেপে যাওয়া থেকে বিরত হয়ে গার্ডিয়ান/চিকিৎসককে বিস্তারিত জানাতে হবে।
বয়সন্ধি কাল শুরু থেকে নিয়মিত নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করতে হবে।
প্রতি বৎসর চিকিৎসক দ্বারা আল্ট্রাসনোগ্রাম/মেমোগ্রাফি করানো উচিত।
৪০ বৎসরের বেশি বয়সিদের প্রতিবছর ১ বার মেমোগ্রাফি করানো ভাল।
যাদের বংশেআছে তাদের অতি সচেতন হতে হবে।
যাদের নিজ পরিবারে বোন, মা,খালা, ফুফুর থাকলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ, পরীক্ষা সকল বিষয়ে যতœবান হতে হবে।
যেহেতু সুনির্ধারিত কোন কারণ জানা নেই সেহেতু সম্ভাব্য ফ্যাক্টর গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
পানের সাথে জর্দ্দা সাদা পাতা, পান মশলা পরিত্যাগ করতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন